জীবনের সাথে সংগ্রাম করতে করতে ক্লান্ত প্রতিবন্ধী টুটুল, তবুও থেমে নেই।

জীবনের সাথে সংগ্রাম করতে করতে ক্লান্ত প্রতিবন্ধী টুটুল, তবুও থেমে নেই।
মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ;
পৃথিবীটা মনোরম করে সাজিয়েছে মওলা মানুষের জন্য,আঠারো হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য।সব মানুষের রয়েছে সমাজে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করার অধিকার। একটু সহানুভূতি পেলে অসহায় মানুষগুলি অন্তত পায় বেঁচে থাকার প্রয়াস।প্রতিবন্ধী সমাজের অভিশাপ নয় বরং আশীর্বাদ।পরের উপর বোঝা নয়, নিজ কর্মে আয় উপার্জন করে বেঁচে থাকতে চায়।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের চরকাটি হারী গ্রামের প্রতিবন্ধী  টুটুল। অন্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে ব্যবসা করে দুই  বোনের লেখাপড়ার খরচ ও  পরিবারের ভরণ পোষণ চালাচ্ছে সে।
ইদানিং  বোনদের লেখাপড়ার খরচ ও অসুস্থ বাবা-মার চিকিৎসার খরচ  চালাতে এখন হিমশিম খাচ্ছে টুটুল। ফলে বহু টাকার  দেনাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সে। তবে বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে একটি ঘরে কোনো রকমে চলছে তার ছোট্ট দোকান। এ যেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক বীরের গল্প।স্বাভাবিক শিশুদের মতো জন্মগ্রহণ করে সে। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে  টুটুল। হঠাৎ পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে যায়।ফলে স্বাভাবিক শিশুর মত সে চলাফেরা করতে পারেনি । অন্য শিশুদের দুরন্তপনা দৌড়াদৌড়ি দেখে তার মনেও স্বপ্ন ছিল।
বিধিবাম বহু চিকিৎসা করেও তার দু পা স্বাভাবিক হয়নি। সেই থেকে ধীরে ধীরে দু’পা বিকল।কত ডাক্তার , কবিরাজ চিকিৎসা করেও কোন ফল হয়নি। তার শরীরে আকৃতি পরিবর্তন হয়ে ৩৭ বছরে তার শরীর বেড়েছে মাত্র ২৬ ইঞ্চি। শারীরিক এই বাধা উপেক্ষা করে ৩০ বছর আগেই নেমেছেন জীবনযুদ্ধে।  শারীরিক প্রতিবন্ধী টুটুল নিজে বসে বসে ক্রেতার হাতে মালামাল তুলে দিচ্ছেন, থেমে নেই তার জীবন। ক্রেতারাও তাকে সহযোগিতা করছেন নিজেদের সাধ্যমতো। দাম পরিশোধ করে নিজের ক্রয়করা মালামাল নিজেই তুলে নিচ্ছেন দোকান থেকে। এভাবেই প্রতিদিন যুদ্ধ করে চলছেন নিজের নিয়তির সাথে।আত্মনির্ভরশীল এই প্রতিবন্ধী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,  আমার দুই  বোন ।ওদের স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে চাকুরী করে স্বাবলম্বী হবে। ওদের স্বপ্নটুকু পূরণ করতে পারলেই আমার জীবন সার্থক হবে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী টুটুল আত্মনির্ভরশীল এক জন মানুষ। উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের চরকাটি হারী গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে। তিন বোন ও এক ভাই।বড় বোনের বিয়ে হয়েছে।ছোট বোন  রুমা হোসেনপুর সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ছে।ছোট বোন  ছোঁয়া এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।  মা বাবা চিকিৎসা বাবদ প্রতি মাসে ৮হাজার  টাকা খরচ হয়।।
বহু  চেষ্টায় ৮ বছর আগে উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে একটি হুইল চেয়ার পেয়ে তা দিয়ে চলাচল করত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই হুইল চেয়ার ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে।  অফিসে অফিসে ঘুরে ও একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করতে পারছেনা সে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এহসানুল হক জানান, টুটুলকে প্রতিবন্ধী ভাতা অনেক পূর্বে দেওয়া হয়েছে। মুদির দোকান সম্প্রসারণ করার জন্য বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল ও নির্বাহী কর্মকর্তা  রাবেয়া পারভেজ জানান, টুটুলের ইলেকট্রনিক্স হুইলচেয়ারের আবেদন পেয়েছি। তাকে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। সমাজের দানশীল ব্যক্তিরা যদি প্রতিবন্ধীকে সহায়তা করে তাহলে প্রতিবন্ধীরা একটু সুখের ছোঁয়া পাবে।প্রতিবন্ধী টুটুলের মতো যোদ্ধাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে পারেন সমাজের বিত্তবান ও পরোপকারী ব্যক্তিরাও। শারীরিক প্রতিবন্ধী টুটুলের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও।
প্রতিস্থাপন করতে পারেন মানবতার দৃষ্টান্ত।

আপনি আরও পড়তে পারেন